কক্সবাজারে ১৫ দিনেই ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা

আব্দুল কুদ্দুস রানা, প্রথম আলো ◑

কক্সবাজার সৈকত এখন পর্যটকে ঠাসা। হোটেল, মোটেল কটেজ ও গেস্টহাউসে কক্ষ খালি পাওয়া দুষ্কর। ইংরেজি নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে এখনই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি।তবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকের সমাগম চলছেই। আর আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন অন্তত ২০ লাখ পর্যটক। ইতিমধ্যে ১৫ লাখের বেশি পর্যটক ঘুরে গেছেন কক্সবাজার। ইংরেজি নববর্ষ বরণে পর্যটকেরা আগেভাগেই বুকিং করেছেন হোটেল কক্ষ।

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পরের ১৫-১৬ দিনে কক্সবাজারে ব্যবসা হবে অন্তত ২০০ কোটি টাকার। বিশেষ করে শুঁটকি ব্যবসা এখন চাঙা। পর্যটকেরা ফিরে যাওয়ার সময় কয়েক কেজি করে শুঁটকি কিনে নিচ্ছেন।

রোববার সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটক সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। প্রায় ছাতাই পূর্ণ।

সৈকতে ভেজা বালু দিয়ে ঘর তৈরি করছিলেন রাজধানীর মগবাজার থেকে আসা তরুণী জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপন করতেই তাঁরা কক্সবাজার এসেছেন। নতুন বছরকে বরণ করেই বাড়ি ফিরবেন।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের গৃহবধূ আমিনা খাতুন বলেন, সৈকতে এত লোকের সমাগম আশা করেননি। লোকজনের হইচই যেন তাঁর আনন্দ মাটি করে দিচ্ছে। তিনি নির্জন ও নিরিবিলি পরিবেশ চান।

পাশের সিগাল, সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকতেও রয়েছে প্রচুর পর্যটক। লোকজন ভাটার সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোসলের জন্য সমুদ্র নামছেন। নানাভাবে চেষ্টা করেও সমুদ্র থেকে লোকজনকে কূলে তুলতে পারছেন না ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কয়েক লাখ পর্যটককে সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা তাঁদের। কঠোর নিরাপত্তার কারণে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো পর্যটক বিপদে পড়েননি।

এছাড়া প্রতিদিন সকালবেলায় কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে পর্যটকের জটলা। তাঁরা হোটেল কক্ষ না পেয়েই বসে থাকেন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন চার লাখের বেশি পর্যটক। কিন্তু হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে আড়াই লাখের। অবশিষ্ট লোকজনের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এ সুযোগে কিছু হোটেল-কটেজ পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষভাড়া হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেলভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে সক্রিয় রয়েছে। পর্যটক হয়রানির যেকোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে টেকনাফ থেকে ৩৪ কিলোমিটারের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত সাত হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পর্যটক পারাপারে রয়েছে ৮টি প্রমোদতরি-জাহাজ ও ৪০টির বেশি কাঠের ট্রলার, স্পিডবোট। কিন্তু বিপুল পর্যটকের চাপ সইতে পারছে না আট বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দ্বীপটি। পর্যটকের রাত কাটানোর জন্য দ্বীপে হোটেল, মোটেল, কটেজ আছে ১০৬টি। এগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় এক হাজার।

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, বিপুল পর্যটকের আগমনে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ যেন বিপন্ন না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ময়লা–আবর্জনা সরিয়ে দ্বীপটি পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে।